নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্যান্সার—একটি ভয়াবহ রোগ যার বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন কোটি কোটি মানুষ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি সত্ত্বেও ক্যান্সারের হার বেড়েই চলেছে, আর এই বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো নিয়মিত খেলে শরীরে প্রদাহ, ওজন বৃদ্ধি ও কোষের ক্ষয় তৈরি হয়—যা ক্যান্সার হওয়ার পরিবেশ তৈরি করে।
বিশ্বজুড়ে চিকিৎসক ও গবেষকেরা সতর্ক করে বলছেন, যেসব খাবার আগে নিরীহ মনে করা হতো, সেগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে থাকতে পারে ক্যান্সারের ঝুঁকি। নিচে এমনই ৬টি খাবার তুলে ধরা হলো যেগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া এখন সময়ের দাবি।
১. আল্ট্রা প্রসেসড মাংস: সুস্বাদের আড়ালে বিপদ
সসেজ, হ্যাম, সালামি কিংবা বেকনের মতো প্রসেসড মাংসজাত খাবারগুলো আমাদের অনেকের পছন্দের তালিকায়। কিন্তু এই খাবারগুলোতে ব্যবহৃত রাসায়নিক সংযোজন যেমন নাইট্রেট ও প্রিজারভেটিভ, শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান হিসেবে কাজ করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এই খাবারগুলোকে গ্রুপ-১ কার্সিনোজেন হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যা সরাসরি কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
২. চিনিযুক্ত পানীয়: ঠান্ডা হলেও জ্বলে ওঠে ভিতরটা
কোল্ড ড্রিংকস, এনার্জি ড্রিংকস ও মিষ্টি জুস—এসব পানীয় শুধু অতিরিক্ত ক্যালরি নয়, বরং ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে।
চিকিৎসক ডঃ শেঠি বলেন, “চিনিযুক্ত পানীয় ক্যান্সার বৃদ্ধির পেছনে সবচেয়ে ভয়ানক ভূমিকা রাখতে পারে।”
স্থূলতা ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সঙ্গে যেমন সম্পর্ক আছে, তেমনি স্তন, লিভার ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ায় এই পানীয়গুলো।
৩. ডিপ ফ্রাইড খাবার: মুখে স্বাদ, শরীরে বিষ
উচ্চ তাপে ভাজা খাবার যেমন ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিপস বা ফাস্ট ফুড জাতীয় পদগুলোতে তৈরি হয় অ্যাক্রিলামাইড নামে একটি রাসায়নিক, যা প্রাণীদেহে ক্যান্সারের কারণ হিসেবে দেখা গেছে।
মানুষের ওপর গবেষণা এখনও চলমান, তবে বিশেষজ্ঞরা একমত—এই খাবারগুলো শরীরে দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ সৃষ্টি করে যা ক্যান্সারের পরিবেশ তৈরি করে।
৪. ঝলসানো বা বারবিকিউ মাংস: আগুনে পুড়েই বাড়ে বিপদ
গ্রিল বা বারবিকিউ পদ্ধতিতে মাংস রান্নার সময় তৈরি হয় Heterocyclic Amines (HCAs) এবং Polycyclic Aromatic Hydrocarbons (PAHs)—দুইটি যৌগই সম্ভাব্য কার্সিনোজেন।
এগুলো DNA-তে ক্ষতি করতে পারে, যা ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, তাপমাত্রা কমিয়ে রান্না করা, ম্যারিনেট করে নেওয়া কিংবা স্টিমিং বা বেকিং পদ্ধতি ব্যবহার করলে ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।
৫. অ্যালকোহল: চুমুকে আনন্দ নয়, মৃত্যুর সম্ভাবনা
অ্যালকোহল শরীরে অ্যাসিটালডিহাইডে রূপান্তরিত হয়, যা একটি বিষাক্ত উপাদান এবং DNA ক্ষতির জন্য দায়ী। স্তন, লিভার, মুখগহ্বর ও কোলনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় এই উপাদান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অল্প মাত্রার অ্যালকোহল পানও ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
৬. অন্যান্য আল্ট্রা প্রসেসড খাবার: চটজলদি খাবার, ধীরগতির রোগ
ইনস্ট্যান্ট নুডলস, প্যাকেট চিপস, চকোলেট সিরিয়াল, প্রক্রিয়াজাত পাউরুটি বা বিস্কুট—এইসব খাবারে থাকে কৃত্রিম রং, অতিরিক্ত চিনি ও চর্বি এবং কেমিক্যাল সংযোজন।
নিয়মিত এসব খাবার খাওয়া শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং কোলোরেক্টাল ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
“ক্যান্সার কোনো একদিনে হয় না, এটি তৈরি হয় আমাদের প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসে। খাবার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রেও চাই সচেতনতা।”
— ডা. রমেশ শেঠি, অনকোলজিস্ট, মুম্বাই ক্যান্সার কেয়ার সেন্টার
খাবার আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে খাবার হতে পারে জীবনদায়ী, আবার হতে পারে জীবননাশকারীও—বেছে নেওয়ার দায়িত্ব আমাদেরই।
যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া খাবার বেছে নিন, এবং প্রসেসড, অতিরিক্ত মিষ্টি ও রাসায়নিকযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। সচেতন থাকলে অনেক সময় বড় বিপদও এড়ানো যায়।
জাকারিয়া ইসলাম/
নিউজটি আপডেট করেছেন : Jatiyo Potrika
ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এমন ৬ খাবার, ডাক্তারদের সতর্কবার্তা
- আপলোড সময় : ০৫-০৭-২০২৫ ১১:২৬:৫২ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৫-০৭-২০২৫ ১১:২৬:৫২ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ সংবাদ